পশ্চিমবঙ্গের জন্য মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ‘মেগা ডে’ হতে চলেছে। কারণ সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে শীর্ষ আদালতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগ দুর্নীতি মামলা, ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলা এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিয়ারনেস অ্যালোওয়েন্স বা ডিএ) মামলা ওঠার কথা আছে। আর প্রতিটি মামলারই রাজনৈতিক গুরুত্ব নেহাত কম নয়। যা আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ‘গেমচেঞ্জার’ হতে পারে।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি মামলা
মঙ্গলবার ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের মামলা উঠতে চলেছে। গত বছরের ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছিল। চাল থেকে কাঁকর বাছাই করা যাবে না বলে জানিয়েছিল হাইকোর্ট।
যদিও রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় যথাযথ নয়। সেইসঙ্গে যোগ্যদের থেকে অযোগ্যদের আলাদা করা যাবে বলে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছে কমিশন এবং রাজ্য সরকার। কমিশনের তরফে দাবি করা হয়েছে যে ১৯,০০০ জনের চাকরি বৈধ।
সেই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয়, হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে কিনা, সেদিকে সব মহলের নজর আছে। যে শীর্ষ আদালতে ইতিমধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য এবং কমিশন। অযোগ্যদের বাদ না দিয়ে কেন সুপারনিউমেরারি পোস্ট (অতিরিক্ত পদ) তৈরি করা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এমনকী সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করেছিল, ‘ডাল মে কুক কালা হ্যায়? ইয়া ফির পুরো ডালা হি কালা হ্যায়?’
ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলা
পশ্চিমবঙ্গের আরও একটা 'মেগা' মামলা হল ওবিসি মামলা। ২০১০ সালের পর থেকে রাজ্যের জারি করা সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, হাইকোর্টের রায়ের ফলে অনেক মানুষের সমস্যা হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য হাইকোর্টের রায়ে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেয়নি। বরং শীর্ষ আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ প্রদান করা যায় না। যে কাজটা রাজ্য সরকার করেনি বলে দাবি করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, 'ধর্মের ভিত্তিতে' কোনও শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মামলা
এসএসএসি এবং ওবিসি মামলার পাশাপাশি পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মামলার শুনানি হওয়ার কথা আছে মঙ্গলবার। ২০১৬ সালে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (স্যাট) থেকে সেই মামলা শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের মে'তে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার।
কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে রাজ্য সরকার স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) দাখিলের পরে মঙ্গলবার ডিএ মামলার ১৪ তম শুনানির দিন। আর তাতে তাঁদের জয় হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।