এর আগেও তিনি পরীমনির সমর্থনে বহুবার সুর চড়িয়েছেন। ফের একবার পরীমনির দুঃসময়ে এগিয়ে এলেন বাংলাদেশের ‘নির্বাসিত’ লেখিকা তসলিমা নাসরিন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের 'পরী'র বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে সেই খবর। যদিও, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরীমনি। তাঁর দাবি ছিল তাঁর নামে মিথ্যে খবর ছড়ানো হচ্ছে, তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। এবার তাঁর হয়েই মুখ খুললেন তসলিমা।
পরীমনির বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ নিয়ে ‘রক্ষণশীল পুরুষতন্ত্র'-কেই দায়ী করেছেন তসলিমা নাসরিন। ঠিক কী লিখেছেন তিনি?
লম্বা পোস্টে তসলিমা লেখেন, ‘পরীমণির সুসময়ে আমি পাশে থাকি না। ওঁর দুঃসময়ে আমি ছুটে আসি। আবার ওঁর আঙিনায় দুঃসময় এসে দাঁড়িয়েছে। এক মহিলা গৃহপরিচারিকার চাকরি নিয়ে ওঁর বাড়িতে ঢুকেছিল। কিছুদিন পর সে বেরিয়ে এসে পরীমণির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে, আর মিডিয়াও বেশ ফলাও করে মহিলার সাক্ষাৎকার ছাপাচ্ছে, যেন মহিলা যা বলছে সবই সত্যি। মিডিয়ার চরিত্র আমরা জানি। নারী, বিশেষ করে সে নারী যদি ব্যতিক্রমী, সাহসী, প্রতিভাময়ী হয়, তাহলে তার সর্বনাশ না করে ছাড়বে না মিডিয়া। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো, রক্ষণশীলতা আঁকড়ে রাখা, ক্ষমতার চাটুকারিতা বাংলাদেশের মিডিয়ার বিশেষ দোষ।’
‘রক্ষণশীল পুরুষতন্ত্র'কে দায়ী করে তসলিমা লেখেন, 'মিডিয়া তো রক্ষণশীল পুরুষতান্ত্রিক লোকদেরই তৈরি। এ আর নারীবিদ্বেষী সমাজ থেকে আলাদা কী হবে! পরীমণিকে আক্রমণ করার জন্য, তাঁর চরিত্রে কালি লেপনের জন্য মহিলাটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ার পর মহিলাকে কিন্তু মিডিয়াও ছুঁড়ে ফেলে দেবে আস্তাকুঁড়ে। কোনও সৎ মিডিয়া কিন্তু কোনও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে এক তরফের বক্তব্য নিয়ে মেতে ওঠে না, দু'তরফের বক্তব্যই গ্রহণ করে। নিরপেক্ষ থাকা মিডিয়ার জন্য অবশ্য কর্তব্য হলেও সেটিকেই তারা সবচেয়ে বেশি অবজ্ঞা করে।'
আরও পড়ুন-বাচ্চাকে খাওয়ানো নিয়ে বচসা, গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগে কী বলছেন পরীমনি? ঠিক কী ঘটেছিল?
পরীমনির বিরুদ্ধে ওই পরিচারিকা যে মিথ্যে বলছেন, সবকিছু দেখে তেমনই মনে হয়েছে লেখিকার। তিনি লেখেন, ‘গৃহপরিচারিকার চাকরি করতে আসা মহিলাটি যে মিথ্যে কথা বলছে তা সহজেই অনুমেয়। তার বর্ণিত চড় খেয়ে মূর্ছা যাওয়ার ঘটনাটি যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি করে। পরীমণির বিরুদ্ধে সে যে নোংরা ভাষায় কথা বলেছে, তাতে মনে হয় সে বদ একটি উদ্দেশ্য নিয়ে পরীমণিকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে এবং এই ষড়যন্ত্রে তাকে অনেকেই সাহায্য করছে। পরীমণির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তার জঘন্য মন্তব্য সব রকম সীমা অতিক্রম করেছে।'
সবশেষে তিনি লেখেন, 'পরীমণি কার সঙ্গে কথা বলবে, খাবে, ঘুরবে, বেড়াবে, শোবে, তা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। সম্মানীয় শিল্পীর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক বাক্যাবলি উচ্চারণ করার জন্য মহিলাকে উৎসাহ দেওয়া বা উসকে দেওয়া এবং সেসব অবাধে প্রচার করা মিডিয়ার উচিত হয়নি। আদালতের উচিত নয় নারীবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের মামলাকে গ্রহণ করা বা আদপেই মূল্য দেওয়া। এই সত্যটা সবারই জানা উচিত, গরিব হলেই মানুষ সৎ হয় না। গরিবরাও অসৎ, ধুরন্দর, বদমাশ, মিথ্যুক, নিষ্ঠুর, চোর, ডাকাত, ধর্ষক, খুনী হতে পারে।’